প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে। কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে (অর্থাৎ যার সম্পদ সে আর ফেরত পাবে না)। জাকাতকে দেখা হবে জরিমানা হিসাবে। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে। বন্ধুকে কাছে টেনে নেবে আর পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে। মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল (কথাবার্তা) হবে।
যখন সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিটি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে। সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (অ্যাসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতা ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার মতো একটির পর একটি নিদর্শনের জন্য’। (তিরমিজি, হাদিস নং : ১৪৪৭)।
আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রা.) বলেন, মহান আল্লাহ মাঝে মধ্যে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে ওঠার অনুমতি দেন। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তখন এ ভূমিকম্প মানুষকে ভীত করে। তারা মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করে, পাপকর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর প্রতি ধাবিত হয় এবং তাদের কৃত পাপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে মোনাজাত করে। আগেকার যুগে যখন ভূমিকম্প হতো, তখন সঠিক পথে পরিচালিত সৎকর্মশীল লোকরা বলত, ‘মহান আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছেন।’
বুখারি শরিফে আছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো, তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’। (বুখারি) শায়খ ইস্পাহানি (রা.) এ আয়াতের তাফসির করে বলেন, ‘এর ব্যাখ্যা হলো, ভূমিকম্প ও ভূমিধসের মাধ্যমে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঢুকে যাওয়া (পৃথিবীতে ভূমিকম্প হওয়া)।’
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং খুনখারাবি বাড়বে, তোমাদের সম্পদ এত বাড়বে যে, উপচে পড়বে। (বোখারি, হাদিস নং : ৯৭৯)। বর্তমানে যেসব ভূমিকম্প ঘটছে, তা মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শনগুলোর একটি।
ভূমিকম্প হলে কী করণীয়?
প্রত্যেক মুসলমানের খুবই আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা উচিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি জনপদের মানুষ ইমান আনত এবং (আল্লাহকে) ভয় করত, তাহলে আমি তাদের ওপর আসমান-জমিনের সব ধরনের বরকতের দুয়ার খুলে দিতাম, কিন্তু তারা (আমার নবিকেই) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।
সুতরাং, তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদের পাকড়াও করলাম’। (সূরা আরাফ : ৯৬)। তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয় অথবা সূর্যগ্রহণ কিংবা ঝড়ো বাতাস বা বন্যা হয়, তখন সবার উচিত মহান আল্লাহর কাছে অতিদ্রুত তওবা করা। তার কাছে নিরাপত্তার জন্য দোয়া করা।
মহান আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্তির জন্য দরিদ্র ও মিসকিনদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং তাদের দান করা। কেননা রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দয়া প্রদর্শন করো, তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করা হবে’। (মুসনাদে আহমদ)। ইতিহাসে আছে, ভূমিকম্প হলে উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের দান-সদকা করার জন্য জোর দিয়ে চিঠি লিখতেন।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভূমিকম্প আল্লাহর একটি সতর্কবার্তা। যাতে মানুষ তার অপরাধ বুঝতে পেরে, ফিরে আসে আল্লাহর পথে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে খাঁটি তওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।